Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

হোয়াইট হাউসে যাওয়ার ট্রাম্পের দুই পথ, বাইডেনের পাঁচটি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ডেমোক্রেটিক চ্যালেঞ্জার জো বাইডেনছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ডেমোক্রেটিক চ্যালেঞ্জার জো বাইডেন
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের হিসাবকে যদি একটা যাত্রাপথ বলে বিবেচনা করা হয়, তবে এটা সহজেই বোধগম্য যে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ একটি নয়, বিভিন্ন। দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিজয় নিশ্চিত করেই একজন প্রার্থীকে পৌঁছাতে হয়, সব মিলে ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট সংগ্রহ করাই হচ্ছে লক্ষ্য। যেকোনো নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান প্রার্থীরা তাঁদের নির্বাচনের কৌশল এমনভাবে নির্ধারণ করেন যেন তাঁদের বিজয়ের একাধিক পথ থাকে। কেননা, নির্বাচন মানেই হচ্ছে অনিশ্চয়তা। ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন, সেটা একমাত্র তাঁরাই জানেন। ২০২০ সালের নির্বাচন তার ব্যতিক্রম নয়। প্রায় নয় কোটি ভোটার ইতিমধ্যেই ভোট দিয়েছেন এবং ৩ নভেম্বরে কমপক্ষে আরও ছয় কোটি ভোটার ভোট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে হিসাব হচ্ছে, রিপাবলিকান প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পথ কোনটি, বিপরীতে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন কোন পথে পৌঁছাতে পারেন হোয়াইট হাউসে। যাঁর বেশি বিকল্প পথ আছে, তাঁর সম্ভাবনা বেশি বলেই ধরে নেওয়া হয়। এ ধরনের হিসাবের প্রথম ধাপ হচ্ছে এটা ধরে নেওয়া যে রাজনীতিতে নাটকীয় কোনো ধরনের বদল না ঘটে থাকলে পূর্ববর্তী নির্বাচনে যে দল যেসব অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী হয়েছিল, সেগুলো তাদের প্রার্থী ধরে রাখতে পারবেন।

২০২০ সালে নির্বাচনের হিসাবের সূচনাও হয়েছে সেভাবেই। এ বছর করোনাভাইরাস, অর্থনীতিতে সংকট, পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এটা বলা যায়, দৃশ্যত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি যে রাজনীতির মানচিত্র নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিরোধী দল এমন কোনো প্রার্থী দেয়নি, যাঁর ক্যারিশমা ভোটের অঙ্ক বদলে দিতে পারে। ফলে, ২০১৬ সালের ভোটের ভিত্তিতেই হিসাব হচ্ছে। সেই হিসাবেই খোঁজা হচ্ছে দুই প্রার্থীর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ কতগুলো।

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে জিতেছিলেন ৩০টি অঙ্গরাজ্য এবং মেইন অঙ্গরাজ্যের একটি ভোট। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৩০৬টি ভোট। ট্রাম্পের দুজন ইলেক্টর তাঁকে ভোট না দেওয়ায় আমরা সাধারণত তাঁর ভোটের সংখ্যা গুনি ৩০৪।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ৩০৬ থেকে সব মিলে বড় জোর ৩৬টি ভোট হারাতে পারেন।

তাঁর হোয়াইট হাউসে ফেরার প্রথম পথ হচ্ছে আগের ফলাফল ধরে রাখা। কিন্তু মিশিগান (১৬), উইসকনসিন (১০) ও পেনসিলভানিয়ায় (২০) তাঁর বিজয়কে অভূতপূর্ব বলেই বিবেচনা করা হয়। আর জনমত জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে, মিশিগান ও উইসকনসিনে তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনা প্রায় তিরোহিত। এর অর্থ হচ্ছে, এই দুই অঙ্গরাজ্য বাদ দিলে তাঁর ভোট দাঁড়ায় ২৭৬টি। পেনসিলভানিয়া জেতা সে জন্যই ট্রাম্পের জন্য অবশ্যই দরকার। কেননা, পেনসিলভানিয়ায় না জিতলে তাঁর জন্য হোয়াইট হাউসের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।

ট্রাম্পের এই পথরেখার বিবেচনায় ধরে নেওয়া হচ্ছে যে তিনি ফ্লোরিডায় জিতবেন। তাঁর ঘাঁটি বলে পরিচিত অ্যারিজোনায় কোনো ধরনের বিপদ ঘটবে না। ওহাইও এবং আইওয়া—যে দুই অঙ্গরাজ্যের জনমত জরিপ বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দিয়ে বলছে, সেগুলো ট্রাম্প ধরে রাখতে পারবেন।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় পথ হচ্ছে পেনসিলভানিয়া হারিয়ে এই ২০টি ভোটের জন্য এমন সব অঙ্গরাজ্য জেতা, যেগুলোয় তিনি ২০১৬ সালে খুব কম ভোটে হিলারি ক্লিনটনের কাছে হেরেছিলেন। সেগুলো হচ্ছে মিনেসোটা (১০), নেভাডা (৬) ও নিউ হ্যাম্পশায়ার (৪)। রিপাবলিকানদের কেউ কেউ এই অঙ্কে ভরসা রাখলেও এখন পর্যন্ত এই তিন অঙ্গরাজ্যে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো রকম ইঙ্গিত বা লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এসব অঙ্গরাজ্যে যদি তিনি বিজয়ী হন, তবে অনুমান করা যায় তিনি অন্যত্র বড় ধরনের চমক দেখাবেন এবং সম্ভবত তখন এই তিন রাজ্যে জেতার খবর বড় খবর হবে না।
বাইডেনের হোয়াইট হাইসে যাওয়ার জন্য অন্তত পাঁচটি পথ দেখা যাচ্ছে। প্রথম পথ হচ্ছে হিলারি ক্লিনটন যে অঙ্গরাজ্যগুলোয় জিতেছিলেন, সেই ২০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিকে ধরে রাখা। আর এতে তিনি পাবেন ২৩২টি ভোট। যদিও আমরা প্রায়ই এই হিসাবকে দেখি ২২৭টি বলে। কেননা, পাঁচজন ইলেক্টর হিলারিকে ভোট দেননি। কিন্তু নির্বাচনের প্রাথমিক ফল আমাদের এই সংখ্যাই দেবে। এর সঙ্গে বাইডেনের দরকার হবে মাত্র ৩৮টি ভোট। তিনি যদি মিশিগান (১৬), উইসকনসিন (১০) ও পেনসিলভানিয়ায় (২০) জেতেন, তবেই তাঁর বিজয় নিশ্চিত হবে। তিনি পাবেন ২৭৮টি ভোট।

দ্বিতীয় পথ হচ্ছে মিশিগান (১৬), উইসকনসিন (১০) ও ফ্লোরিডা (২৯) জিতে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে তিনি পেনসিলভানিয়ায় হারালেও তাঁর বিজয় বাধাগ্রস্ত হবে না। ফ্লোরিডা সব সময়ই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয়। জনমত জরিপগুলো এখনো তা–ই বলছে। ফলে এটি একেবারে বিবেচনার বাইরে নয়, কিন্তু এটার ওপরে নির্ভর করা বাইডেনের জন্য খুব নির্ভরযোগ্য পথ নয়। এই হিসাবে তাঁর ভোট হবে ২৮৭টি।

বাইডেনের তৃতীয় পথ হচ্ছে মিশিগান (১৬), উইসকনসিন (১০) ও নর্থ ক্যারোলাইনায় (১৫) জেতা, এতে দাঁড়াবে ২৭৩টি ভোট। ২০০৮ সালে বারাক ওবামা নর্থ ক্যারোলাইনা জিতেছিলেন, শেষ জরিপে দুই প্রার্থীর পার্থক্য ‘মার্জিন অব এররের’ ভেতরেই আছে।

বাইডেনের জন্য চতুর্থ পথ হচ্ছে মিশিগান (১৬), উইসকনসিন (১০) এবং ওহাইও (১৮) জেতা। সেটার অর্থ হচ্ছে ট্রাম্পের কাছ থেকে তিনটি রাজ্য ছিনিয়ে নেওয়া। তাতে বাইডেনের ভোট দাঁড়াবে ২৭৬টি।

বাইডেনের পঞ্চম পথ হচ্ছে মিশিগান (১৬) ও উইসকনসিনের (১০) সঙ্গে অ্যারিজোনা (১১) যুক্ত করা। কিন্তু তা তাঁকে বিজয়ী করবে তা নয়, ২৬৯ ভোট নিয়ে তিনি অচলাবস্থা তৈরি করতে পারবেন। জিততে হলে তাঁকে নির্ভর করতে হবে মেইন অঙ্গরাজ্যের চারটি ভোটের মধ্যে ট্রাম্প যে একটি ভোট পেয়েছিলেন, সেটা তাঁর পক্ষে আনা। কেবল তা হলেই দাঁড়াবে ২৭০টি ভোট।

বাইডেনের এসব পথের দিকে তাকালে যেটা স্পষ্ট, তা হচ্ছে মিশিগান ও উইসকনসিনকে বাদ দিয়ে বাইডেনের অগ্রসর হওয়ার পথ অত্যন্ত সীমিত, বলা যেতে পারে অসম্ভব। কেননা, এই দুই অঙ্গরাজ্য জেতার মতো সমর্থন না থাকলে অন্য অঙ্গরাজ্যে তাঁর সমর্থন থাকবে, এমন মনে করার কারণ কম। সে ধরনের দৃশ্যপট হবে অতিমাত্রায় নাটকীয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জো বাইডেন—কে শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে যেতে পারবেন, কোন পথে যেতে পারবেন, সেই সিদ্ধান্ত তাঁদের নিজেদের নয়, সিদ্ধান্ত দেবেন ভোটাররা। কেননা, হোয়াইট হাউসের চাবি তাঁদের কাছেই।