Header Ads Widget

Responsive Advertisement

Ticker

6/recent/ticker-posts

ক্ষমতার শেষ দিনগুলোতে ট্রাম্প কী করতে পারেন

 গলফ মাঠ থেকে ৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ট্রাম্প

গলফ মাঠ থেকে ৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

পরাজয় মানুন-না মানুন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে হচ্ছে নিশ্চিতভাবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। গত চার বছরে একের পর এক আইন ও রীতি ভাঙা এই প্রেসিডেন্ট ওভাল অফিসে আরও দুই মাসের বেশি সময় থাকছেন, যেখানে তাঁকে বাধা দেওয়ার আর কোনো অজুহাত নেই। কারণ, তাঁকে আপাতত ভোটারদের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি মাথায় নিতে হবে না। ফলে তিনি এই সময়ে যাচ্ছেতাই অনেক কিছুই করতে পারেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে সাংবিধানিক নানা সংকট সৃষ্টির আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এমন অন্তত তিনটি ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে আগামী কয়েক দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রতিহিংসার ছাপ ফেলতে পারেন। অফিস ত্যাগের আগে মার্কিন গণতান্ত্রিক কাঠামোর আরও অনেক ক্ষতি করার সামর্থ্য এখনো আছে তাঁর।

এ ক্ষেত্রে শুরুতেই আসতে পারে ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি। সামনের দিনগুলোতে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি অনেককেই ক্ষমা করতে পারেন, যা হয়তো পরে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হবে। সিএনএন জানায়, সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা তাঁদের ওভাল অফিসে শেষ দিনে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন নিজের ভাই রজার ক্লিনটন ও পলাতক শত কোটিপতি মার্ক রিচকে ক্ষমা করেছিলেন। ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে কাদের ক্ষমা করতে পারেন?

সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি উঠছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নিজেকে ক্ষমা করে দেবেন? প্রেসিডেন্ট নিজেকেই ক্ষমা করতে পারেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়

এ ক্ষেত্রে সবার আগে আসতে পারে মাইকেল ফ্লিনের নাম। সাবেক এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বর্তমানে আদালতে লড়ছেন মামলা থেকে মুক্তি পেতে। তাঁর আইনজীবী এই মামলা সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করছেন ট্রাম্পকে। যদিও তাঁরা আদালতের মাধ্যমেই মামলা থেকে নিষ্কৃতি চাইছেন। কিন্তু ভয় রয়েছে, আদালত সাজা শুনিয়ে দিতে পারেন। ফলে মাইকেল ফ্লিনের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক হচ্ছে ট্রাম্পের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়া। এ ছাড়া বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের তদন্তে অভিযুক্ত হওয়া পল ম্যানাফোর্ট, জর্জ পাপাডোপোলাসসহ অনেককেই তিনি ক্ষমা করতে পারেন। এদের দুজনের সাজা ভোগ শেষ হলেও ট্রাম্প এটি করতে পারেন ম্যুলারের প্রতি রোষের বশে।

এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নিজের পরিবারের বিভিন্ন সদস্য ও ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা থেকেও তাদের মুক্তি দিতে পারেন ট্রাম্প। তবে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে প্রভাব রাখতে পারবেন না। কারণ, প্রেসিডেন্টের ক্ষমার আওতায় শুধু ফেডারেল অপরাধ। অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের কোনো অভিযোগ থেকে তিনি কাউকে মুক্তি দিতে পারেন না। ফলে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে চলা একাধিক জালিয়াতির মামলার ক্ষেত্রে তিনি কিছু করতে পারবেন না।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি উঠছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি নিজেকে ক্ষমা করে দেবেন? প্রেসিডেন্ট নিজেকেই ক্ষমা করতে পারেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়। এ ধরনের চেষ্টা আগে কেউ কখনো করেনি। সংবিধানে ক্ষমা করার এই ক্ষমতায় কোনো সীমা টানা হয়নি। কোনো আইন বিশেষজ্ঞের এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ভাষ্যও পাওয়া যায় না। ট্রাম্প যদি শেষ পর্যন্ত নিজের ক্ষেত্রেই এ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন, তবে ফেডারেল আদালত থেকে নিশ্চয় এর কোনো উত্তর ও ব্যাখ্যা আসবে।

এফবিআই পরিচালক ক্রিস রে  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নাকচ করায় তার ওপর ক্ষুব্ধ তিনি
এফবিআই পরিচালক ক্রিস রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নাকচ করায় তার ওপর ক্ষুব্ধ তিনি
ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পদে থাকার বাকি সময় দ্বিতীয় যে কাজটি করতে পারেন, তা হলো বরখাস্ত। সিএনএন জানায়, একজন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ফুরানোর পর তাঁর প্রশাসনের অধিকাংশই তাঁর সঙ্গে সঙ্গে বিদায় হয়। কিন্তু কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে যান। এই কর্মকর্তাদের বরখাস্তের উদ্যোগ নিতে পারেন ট্রাম্প। তেমনটি করলে এ তালিকার শীর্ষে থাকবেন এফবিআই পরিচালক ক্রিস রে। ফেডারেল আইন অনুযায়ী এই পদে একজন ১০ বছর থাকতে পারেন। কিন্তু ২০১৭ সালের আগস্টে নিয়োগ পাওয়া ক্রিস রে-এর মেয়াদ তার আগেই শেষ হতে পারে। বিশেষত এই শেষ মুহূর্তেও নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির যে অভিযোগ ট্রাম্প তুলেছেন, তাকে ক্রিস রে খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে তিনি ট্রাম্পের রোষানলে পড়তে পারেন। অবশ্য সমস্যা নেই। বাইডেন চাইলে ক্ষমতায় এসে তাঁকে আবার এই পদে পুনর্নিয়োগ দিতে পারবেন।

ক্রিস রে ছাড়াও ট্রাম্প ইন্সপেক্টর জেনারেলকে (আইজি) বরখাস্ত করতে পারেন। ফেডারেল প্রতিটি সংস্থাতেই এমন একজন করে আইজি রয়েছেন নজরদারির জন্য। সব প্রেসিডেন্টেরই এসব পদে মনোনয়ন দেওয়া ও বরখাস্ত করার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু ট্রাম্প এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে অভ্যস্ত। তিনি এর আগে সাবেক আইজি মাইকেল অ্যাটকিনসনকে বরখাস্ত করেছিলেন। অপরাধ ছিল এমন বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনা, যার কারণে ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।

এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প বিচার বিভাগের আইজি মাইকেল হরোউইট্‌জকে বরখাস্ত করতে পারেন। ওবামা প্রশাসনের সময়ে নিয়োগ পাওয়া এই আইজি ২০১৯ সালে নির্বাচনে ট্রাম্প প্রচার শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার আঁতাত নিয়ে করা এফবিআইয়ের তদন্ত রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নয় বলে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।

অফিস ত্যাগের আগে ড্রিমারস প্রকল্প হিসেবে পরিচিত ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) বাতিল করতে আবার নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন

এই শেষ সময়ে ট্রাম্প তৃতীয় যে অস্ত্রটির প্রয়োগ করতে পারেন, তা হলো নির্বাহী আদেশ। তিনি নিজের রাজনৈতিক বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ অস্ত্রের শরণ নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। সিএনএন বলছে, অফিস ত্যাগের আগে ড্রিমারস প্রকল্প হিসেবে পরিচিত ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) বাতিল করতে আবার নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন। এর আগে একই লক্ষ্যে দেওয়া একটি নির্বাহী আদেশ সুপ্রিম কোর্ট আটকে দিয়েছিল। এ ছাড়া অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট, পরিবেশ ও অভিবাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতি বদলের জন্যও তিনি এমন নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন। বাইডেন ক্ষমতায় এসে আবার এর পাল্টা নির্বাহী আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু ডাকা ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া আদেশে, কোনো প্রশাসন আগের প্রশাসনের দেওয়া কোনো নির্বাহী আদেশ উল্টে দেওয়ার স্বয়ংক্রিয় ক্ষমতা পায় না।

হোয়াইট হাউসে থাকাকালে ট্রাম্প বরাবরই নিজের নিয়মে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এত বছরের চলে আসা নিয়ম-নীতি ও রেওয়াজের তোয়াক্কা তিনি করেননি। এখনো করছেন না। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও তিনি নিজের মতো করে চলেছেন। গত চার বছরে ট্রাম্পের কার্যক্রম যদি মার্কিন আইন ও রীতি-নীতির প্রতি অশ্রদ্ধার হয়ে থাকে, তবে ২০ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত তিনি কত কী করতে পারেন—তা আসলে এখন অনুমান করাই কঠিন।